দুরন্ত কৈশোরে সামাজিক সাংস্কৃতিক আর ক্রীড়া কর্মকান্ডে’র মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠেছিলো তার মনওমনন। অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষের দুঃখ, দুর্দশায় তার হৃদয়ে জাগ্রত হতো অগাধ মায়া মমতা আর ভালবাসা। কিন্তু অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছিলো তার পাহাড়সম আত্ম প্রত্যয়ী বলিষ্ঠ প্রতিবাদী চরিত্রের দৃঢ়চেতা মনোভাব।
পাবনা জেলার, সাথিয়া থানার, নন্দনপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হক। বাবা মোছলেম উদ্দিন এবং মা সৈয়তুন্নেসার পাঁচ ছেলে ও সাত কন্যা সন্তানের মধ্যে মাইনুল হক ছিলেন চতুর্থ। ছায়াঘেরা, পাখিডাকা, অপরুপ, সবুজ শ্যামল প্রকৃতির সংস্পর্শে দুরন্ত শৈশব এবং কৈশোর কাটিয়ে যৌবনের প্রারম্ভে স্থায়ী হন রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে।
৬৯’র গণ অভ্যুত্থান, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫’র ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলন, স্বাধীনতা বিরোধী চারদলীয় ঐক্যজোটের সংখ্যালগু নির্যাতন, হামলা, মামলা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট বর্বর গ্রেনেড হামলা, ওয়ান ইলেভেনের মইন ফখরুদ্দিন সরকার কর্তৃক গ্রেফতার শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলন, সহ দেশ বিরোধী অপশক্তি, অপশাসন সহ সকল অগণতান্ত্রিক অপশক্তির বিরুদ্ধে সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে আমরণ সংগ্রামী এক চরিত্র বীর মুক্তিযুদ্ধা মরহুম মাইনুল হক।
৬৯’র গণ- অভ্যূত্থানের সময় সদ্য স্কুল পেরেনো আঠারো বছরের এক টগবগে তরুণ মাইনুল হক কলেজে ভর্তি হন। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজপথের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। পশ্চিম পাকিস্তানি শাষক গোষ্ঠীর শাসনের নামে শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে, সেই সময়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, বাংলার ইতিহাসের কিংবদন্তির মহানায়ক, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারাদেশব্যপী চলছিলো বাঙ্গালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী আওয়ামিলীগ কে সরকার গঠন করতে না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাষক গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠে। বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া সেই জ্বালাময়ী ভাষন সেদিন মাইনুল হকের তরুণ মনে আগুন জ্বেলে দিয়েছিলো।
২৫ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পাগল হাজার হাজার বীর বাঙ্গালির মিছিলে সেদিন সমমনা প্রায় পনেরো জন বন্ধুকে সাথে করে প্রথমে কেচুয়াডাংগা, শিকারপুর মুক্তি ক্যাম্প এ যোগ দেন তরুণ মাইনুল হক। পরবর্তীতে ভারতের আসাম মেঘালয়ে তোলা ডাঙ্গায় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ১১ নং সেক্টরে মাত্র ১৮ দিনের যুদ্ধ প্রশিক্ষন নিয়ে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়েন। অসম সাহসী বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য সম্মুখ সমরে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। শত্রুর আক্রমণ তাকে বিন্দুমাত্র ভীত করতে পারেনি। বরঞ্চ শত্রু ঘাটি লক্ষ্য করে তার হাতের অস্র গর্জে উঠতো বারবার। মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে অবস্থান করা পাক হায়েনাদের প্রতি তার ঘৃনা ও আক্রোশ সহযোদ্ধাদের ভীষন ভাবে অনুপ্রাণিত করতো। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর আক্রমনে পাকবাহিনী যখন ভীত-সন্ত্রস্ত, বিপর্যস্ত, বিজয় যখন আসন্ন ঠিক সেই সময় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে এক সম্মুখ যুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করার সময় শত্রু সৈন্যের আর্টিলারি ও মর্টার হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এই বীর মুক্তিযুদ্ধা। সহযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ভারতের গৌহাটির একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সমস্ত শরীরের চামরা পুড়ে গিয়েছিল এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তার ডান পা টি তিনি প্রিয় মাতৃভূমির জন্য বিসর্জন দিয়েছিলেন চিরদিনের জন্য। ১৬ ই ডিসেম্বর যখন পৃথিবীর মান চিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে, তখনও এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরদেশের একটি হাসপাতালের বিছানায় ছিলেন প্রায় সংজ্ঞাহীন। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকার গঠনের পরপর তার নির্দেশে আওয়ামিলীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী কোরবান আলীর নেতৃত্বে একটি দল ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে আহত মুক্তিযুদ্ধাদের পরিদর্শনের সময় এই অসম সাহসী বীর মুক্তিযুদ্ধার দেখা পান। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আহত মুক্তিযুদ্ধাদের রুমানিয়া ও জার্মানীতে চিকিৎসার জন্য প্রেরন করা দলে এই বীর মুক্তিযুদ্ধাকেও পাঠানো হয়। জার্মানীতে চিকিৎসা কালীন সময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী এই বীর মুক্তিযুদ্ধাকে দেখতে যান। বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হককে দেশপ্রেমিক বীর সন্তান উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে স্বাক্ষর করা একটি চিঠি তার হাতে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে আওয়ামিলীগ এর দলীয় প্যাডে দলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ও বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হককে তার বীরত্বের জন্য প্রশংসিত করা হয়। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধে সাহসী অবদানের জন্য জীবিত মুক্তিযুদ্ধাদের সর্বোচ্চ বীর প্রতীক, বীর বিক্রম উপাধি পাওয়ার নিশ্চিত যোগ্যতা থাকা সত্বেও নিজ সেক্টর কমান্ডারদের নির্বাচিত নামের তালিকায় তার নাম না থাকায় তিনি বঞ্চিত হন।
দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে পা হারানো এই বীর মুক্তিযুদ্ধা কৃত্রিম পা নিয়ে জার্মানি থেকে স্বাধীন দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেই বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে গিয়ে দেখতে পান, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু এক ভিন্ন সংগ্রামে অবতীর্ন হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর দেশ পুনর্গঠনের সংগ্রামে যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হক নিজেও আত্মনিমগ্ন হয়ে দেশের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।
পাকিস্তানি বর্গী হায়েনাদের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংস প্রায় বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু যখন সুখী, সুন্দর, সসমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাদের দোসররা দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এই বর্বর, ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যে কয়জন বীর সেনানীর প্রতিবাদী কন্ঠ গর্জে উঠেছিলো, তাদের মধ্যে অকুতোভয় বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হক ছিলেন অন্যতম। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান আর হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ স্বাধীনতা বিরোধী ও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি আদর্শের ভিত্তিতে সামরিক আর স্বৈরাচারী শাসন ব্যাবস্থার মাধ্যমে শাসনের নামে শোষণ ব্যাবস্থা কায়েম করে।
জিয়াউর রহমানের সামরিক শাষনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা
ও মৃত্যু ভয় তুচ্ছ করে যেদিন ভারত থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করে জাতির জনকের কন্যা, সেদিন হাজারো লক্ষ জনতার স্রোতে মিশে গিয়ে বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হক ও সর্বস্ব হারানো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অদূরে দাড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন। দেশে প্রত্যাবর্তন করেই শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবীতে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচী আহবান করেন। বঙ্গবন্ধুর বিচারের দাবী সহ আওয়ামিলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হক অংশগ্রহন করে লাখো জনতার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচারের দাবিতে ছিলেন সদা অবিচল।
সামরিক শাসক জিয়া চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে অগনতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ততকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। দীর্ঘ নয় বছর এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন মুক্তিযোদ্ধা মাইনুল হক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী প্রবল গন-আন্দোলনে রাজপথে বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হকের দৃপ্ত কন্ঠে গর্জে উঠেছিলো প্রতিবাদী স্লোগান –“স্বৈরাচার নিপাত যাক- গনতন্ত্র মুক্তি পাক”। অবশেষে এরশাদের পতন হয়। ৯১’র সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সার্বক্ষণিক প্রচার-প্রচারণায় অংশ গ্রহন করেন। খালেদা জিয়ার ১৫ ই ফেব্রুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে সংগঠিত সফল আন্দোলনে ও রাজপথে ছিলেন এই যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা।
৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মকবুল হোসেনকে বিজয়ী করতে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। ২০০১ সালের চরম বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার গঠন করার পর সমগ্র বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সহ স্বাধীতার পক্ষ শক্তির উপর বর্বর অত্যাচার আর নিপীড়ন সহ যে হামলা মামলা শুরু করে, সেই হামলা মামলা আর অত্যাচার থেকে রেহাই পাননি এই বীর মুক্তিযুদ্ধা। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট বর্বর গ্রেনেড হামলা প্রত্যক্ষ করেছেন খুব কাছ থেকে। সৃষ্টি কর্তার অশেষ রহমতে নিজে বেঁচে গেলেও স্পীন্টারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত আহত ও নিহত আওয়ামিলীগ নেতাকর্মীদের করুন মৃত্যুযন্ত্রণা সেদিন তাকে ভীষণ ভাবে কষ্ট দিয়েছলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কথা মনে পড়তেই উদভ্রান্তের মতো ছুটোছুটি করতে থাকেন। ছুটতে থাকা মানুষজনের নিকট নেত্রীর খবর জানতে চান। যখন কেউ কিছু বলতে পারছিলোনা তখন তার ব্যাকুল নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়ে জলধারা নেমে আসে।
চারদলীয় ঐক্যজোটের ষড়যন্ত্রের নির্বাচন রুখে দিয়ে দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মঈন উদ্দিন ও ফখরুদ্দীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকার গঠন করে প্রথমেই গণমানুষের নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। সংস্কারের নামে আওয়ামিলীগ অভ্যন্তরে প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ যখন নেত্রীর মুক্তির বিপক্ষে ছিলো তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত অনুসারীদের একজন এবং জাতির জনকের আদর্শিক সন্তান হয়ে শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোনে রাজপথে নেমে এসেছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা মাইনুল হক।
মুক্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর ঢাকা ১৩ আসনে সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোয়ন লাভ করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী হয়ে আসায় মাইনুল হক নিজে খুবই আনন্দিত হন। এবং নির্বাচনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে সাহায্য করেন। নির্বাচনকালীন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাইনুল হক তার নির্মোহ, নির্লোভ আর সদাচরণের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর কবির নানক এর অত্যন্ত আস্থাভাজন ও প্রিয় হয়ে উঠেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের এই বীর সেনানী দেশপ্রেম আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ ও লালন করতেন মনেপ্রাণে। তাইতো যোগ্যতা, ও সকল সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও দলীয় পদপদবী বা রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতি তার কোনপ্রকার মোহ কাজ করেনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ইচ্ছে করলেই হতে পারতেন কেন্দ্রীয় নেতা। কামাতে পারতেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু তিনি চেয়েছেন নিজ এলাকার সাধারন মানুষের সুখেদুখে তাদের পাশে থেকে তাদেরই একজন হয়ে থাকতে। তিনি মোহাম্মদপুর থানা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার আর ২৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামিলীগ ‘র সাধারন সম্পাদক এর দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেই খুশি ছিলেন।
অথচ নেতৃত্বের সহজাত গুণাবলী, অহংবোধ, উদারতা আর সাধারন মানুষকে বুকে টেনে নেওয়ার অসাধারন ব্যাক্তিত সম্পন্ন এই মানুষটি দলমত নির্বিশেষে এলাকার সাধারণ জনগনের নিকট ছিলেন বিপুল জনপ্রিয়।
এলাকার মানুষের প্রতি তার ভালবাসা শুধুমাত্রএকটি ঘটনায় ফুটে উঠে। নিজ এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিলে সাধারন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, নিজে আওয়ামিলীগ এর সাধারন সম্পাদক, এবং নিজ দলীয় সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক এর অত্যন্ত প্রিয় হয়েও, খোদ নিজ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়েছিলেন। এবং জাহাঙ্গীর কবির নানককে গ্যাস সংকট নিরসনে বাধ্য কিরেছিলেন।
৭১এর রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযুদ্ধা ২০১৩ সালের ২৩ শে অক্টোবর, নিজ জন্মভূমি পাবনার সাথিয়ায় একটি রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ শেষে সপরিবারে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে মারাত্মক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রিয়তম স্ত্রী সহ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।(ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন না ইলাইহি রাজেউন)। দূর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হন তার ছেলে, ছেলের বউ এবং তাদের একমাত্র শিশু কন্যা। মুক্তিযুদ্ধের এই বীর যোদ্ধার মর্মান্তিক মৃত্যুতে সেদিন এলাকায় নেমে এসেছিলো শোকের ছায়া। দলমত নির্বিশেষ প্রিয়জন হারানোর ব্যাথায় ব্যথিত হয়েছিলেন সকল মানুষ। স্থানীয় সাংসদ এবং ততকালীন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এ্যাডঃ জাহাঙ্গীর কবির নানক দুর্ঘটনাস্থল থেকে লাশ ঢাকায় আনা ও দাফন কাফনের ব্যাবস্থা সহ সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার, এবং জানাজা শেষে হাজারহাজার সাধারণ মানুষ এই বীর মুক্তিযুদ্ধাকে শেষ বিদায় জানান।